শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ০৮:০৭ অপরাহ্ন

বানিয়াচংয়ে ভোটের মাঠে আওয়ামী লীগের তিন হেভিওয়েট নেতা

বানিয়াচং প্রতিনিধি: নির্বাচন কমিশনের ঘোষণা অনুযায়ী প্রথম ধাপে আগামী ৮ মে হতে যাচ্ছে বানিয়াচং উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে গত মঙ্গলবার প্রতীক বরাদ্দের পরপরই নির্বাচনী প্রচারে নেমে পড়েছেন প্রার্থীরা। শুরু করেছেন জনসংযোগ। নিজ নিজ প্রতীকের পোস্টার টানানোর পাশাপাশি মাইকেও চলছে প্রচার-প্রচারণা। প্রার্থীরা ভোটারদের দৃষ্টি আকর্ষণে নিচ্ছেন নানামুখী পদক্ষেপ। গ্রাম থেকে হাট-বাজার এমনকি পাড়া মহল্লার হোটেল রেস্তোরায় চলছে প্রার্থীদের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা। প্রার্থীদের অতীত-বর্তমান নিয়ে করে যাচ্ছেন চুলচেরা বিশ্লেষণ।

এ বছর বানিয়াচং উপজেলা নির্বাচনে হেভিওয়েটের ৩ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এদের মধ্যে তিনজনই আওয়ামী লীগ নেতা। যেহেতু দল থেকে কাউকে মনোনয়ন দেয়া হয়নি তাই সকলেই স্বতন্ত্র হয়ে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন।

প্রতীক পাওয়ার পর থেকেই নির্বাচনী মাঠে সরব সবাই। প্রতীক পেয়েই বর্তমান উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা যুবলীগের সভাপতি আবুল কাশেম চৌধুরী (মোটরসাইকেল) নিজেকে আবারো উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে তার কর্তৃত্ব ধরে রাখতে উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে গিয়ে নির্বাচনী জনসভা ও মতবিনিময় সভা নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন।

আগামী নির্বাচনে উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন খান (আনারস) আনুষ্ঠানিকভাবে মাঠ-ময়দানে চষে বেড়াচ্ছেন। দিনরাত ভোটারদের কাছে গিয়ে নিজের জন্য ভোট চাচ্ছেন।
মাঠে রয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ আমির হোসেন মাষ্টারও (ঘোড়া।

এবার উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক করতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কোন প্রতীক অথবা নির্দিষ্ট কোন প্রার্থীকে সমর্থন দিচ্ছে না। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে প্রার্থীরা তাদের মতো করে নিজেদের জনপ্রিয়তাকে পুঁজি করে নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে আসতে হবে এমনটাই মনে করছেন ভোটাররা।

তফসিল ঘোষণার পর থেকে উপজেলাজুড়ে বিরাজ করেছিল ভোটের আমেজ। উৎসবমুখর পরিবেশে চলছে প্রচারণা। জাতীয় নির্বাচন-উৎসবে যেমন সব শ্রেণি-পেশার মানুষ একযোগে অংশ নেয় তেমনই ভোটের মাঠেও যোগ দিয়েছে সব বয়সের সব শ্রেণির পেশার মানুষ। প্রার্থী ও তাদের কর্মী-সমর্থকরা ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ছুটছেন। গণসংযোগ থেকে শুরু করে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোট চাচ্ছেন তারা। পথসভা-উঠান বৈঠক করে দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতিও। স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা খেলার মাঠে বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানে হাজির হয়ে দিয়ে যাচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতি। শুধু মাঠে ময়দানেই নয় প্রযুক্তির কল্যাণে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ইউটিউবসহ নানা মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে ভোটের প্রচারণা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে উপজেলার একাধিক ভোটারদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমান চেয়ারম্যান অনেক শক্তিশালী প্রার্থী। তবে যেহেতু এবার দলীয় কোন নির্বাচন বা প্রতীকের নির্বাচন হচ্ছে না তাই তার জন্য একটু কঠিন হয়ে যাবে বেরিয়ে আসাটা। তারপরও তিনি রানিং চেয়ারম্যান হিসেবে তার গ্রহণযোগ্যতা আছে।

তারা আরও জানান, অপরদিকে সাবেক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান একজন সফল পঞ্চায়েত ব্যক্তিত্ব হিসেবে উপজেলাজুড়ে তার যথেষ্ট সুনাম রয়েছে। বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকাকে বিজয়ী করতে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। যদিও তিনি বর্তমানে দলীয় কোন পদ-পদবীতে নেই। বিগত দিনের কর্মকাণ্ড মূল্যায়ন করলে এই নির্বাচনে তার বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি বলে জানিয়েছে ভোটাররা।

তাছাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ আমির হোসেন মাষ্টার পুরো উপজেলাজুড়ে তিনিও চষে বেড়াচ্ছেন। দলীয় কিছু নেতাকর্মীরা তার সাথে কাজ করে যাচ্ছেন। একজন ত্যাগী রাজনীতিবিদ হিসেবে তাকে এবার শেষমেশ সুযোগটা দেয়াটা দরকার বলে মত প্রকাশ করেন তারা।

অন্যদিকে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৮ জন প্রার্থী প্রতীক পেয়ে নির্বাচনী মাঠে রয়েছে। তারা হলেন-আশরাফ হোসেন খান (চশমা), এস এম সুরুজ আলী (মাইক), কৃষ্ণ দেব (টিউবওয়েল), তাফাজ্জুল হক (বই), প্রিয়তোষ রঞ্জন দেব (বৈদ্যুতিক বাল্ব), আসিক মিয়া (তালা), ফারুক আমীন (উড়োজাহাজ), সৈয়দ নাছিরুল ইমাম (টিয়া পাখি)।

মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৩ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। তারা হলেন জাহেনারা আক্তার বিউটি (প্রজাপতি), মুক্তা রানী দাস রিয়া (ফুটবল) ও শিউলি রানী দাস (কলস)।

আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে সামনে রেখে কঠোর অবস্থানে রয়েছে উপজেলা নির্বাচন অফিস। কোথাও কোন ধরনের নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করা হলে তাৎক্ষনিক ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছেন বানিয়াচং উপজেলা নির্বাচন অফিসার ও সহকারী রিটার্নিং অফিসার সৈয়দ কামাল হোসেন।

তিনি গত সোমবার বানিয়াচং সদরসহ বেশ কয়েকটি এলাকা পরিদর্শন করে তিনি স্থানীয় ভোটারদের সাথে আলাপকালে জানান, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং আনন্দঘন পরিবেশে আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ভোটারগণ যেন তাদের নিজ নিজ পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারেন সেই পরিবেশ বজায় রাখবে নির্বাচন কমিশন।

প্রসঙ্গত, আগামী ৮ মে (বুধবার) ভোট হবে বানিয়াচং উপজেলায়। এই উপজেলায় মোট ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৭২ হাজার ৬শ ১০ জন। এর মধ্যে মহিলা ভোটার ১ লাখ ৩৪ হাজার ৮শ ৩১ ও পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৩৭ হাজার ৭শ ৭৯ জন। ভোট কেন্দ্র রয়েছে ১০৬টি।

এই নিউজটি আপনার ফেসবুকে শেয়ার করুন

© shaistaganjerbani.com | All rights reserved.